মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ::
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হলেও এর কার্যকর সমাধান কিভাবে এবং কখন তা এখনও সুদূর পরাহত। বিশ্ব চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার এখন এক নতুন কৌশল অবলম্বন করেছে। আর তা হচ্ছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি। সীমান্তের ওপারের সূত্রগুলো জানিয়েছে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সে দেশের কয়েকটি সংগঠনকে হাতে নিয়ে নতুন যে তৎপরতা শুরু করা হয়েছে তা হচ্ছে এনভিসি (ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড) গ্রহণ করা। যে কার্ডে রয়েছে রোহিঙ্গারা রাখাইনের মুসলমান হলেও তারা বাঙালী অভিবাসী।
বুধবার পর্যন্ত ১০৩ দিন অতিবাহিত হয়েছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা। টেকনাফ-উখিয়া অঞ্চলে বাংলাদেশ সরকার এদের প্রতি মানবিক দিক বিবেচনা করে আশ্রয় দিয়েছে। এ রোহিঙ্গাদের মাঝে অনেকেই রয়েছে ধর্মান্ধ এমনকি উগ্রতারও কমতি নেই। এ অবস্থায় পর্যটন নগরী কক্সবাজারে তাবলীগ জামায়াতের উদ্যোগে আজ থেকে শুরু হচ্ছে ৩ দিনব্যাপী এজতেমা। সমুদ্র সৈকতের ডায়াবেটিক পয়েন্টে আজ বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজের পর থেকে এজতেমা শুরু হবে। ৯ ডিসেম্বর আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে তা শেষ হবে। এজতেমাকে কেন্দ্র করে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ত্যাগ করে এতে অংশগ্রহণের নামে অন্যত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে যেতে পারে এ আশঙ্কায় প্রশাসনের সকল সংস্থাগুলোকে ইতোমধ্যে সতর্ক করা হয়েছে। অপরদিকে, রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে মঙ্গল ও বুধবার নতুন চার শতাধিক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। টেকনাফের লম্বরিপাড়া, শাহপরীরদ্বীপ ও শামলাপুর দিয়ে এসব রোহিঙ্গারা রাখাইন থেকে পালিয়ে এসেছে।
এদিকে রাখাইন থেকে এখনও রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসার ঘটনা ক্রমাগতভাবে উদ্বেগ উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করে চলেছে। বিশ্বজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করা এ ইস্যুক শেষ পরিণতি কি হবে তা নিয়ে শঙ্কা ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলেছে। রোহিঙ্গা জাতি গোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘর জ্বালাও পোড়াওয়ের ঘটনা নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শেষ পর্যন্ত কার্যকর যে সিদ্ধান্ত হোক না কেন-মূল প্রশ্ন বারেবারে ঘুরপাক খাচ্ছে ওরা নিজ দেশে কখন ফিরে যাচ্ছে বা আদৌ ফিরে যাবে কিনা।
ইজতেমায় রোহিঙ্গা সমাগমের সম্ভাবনা ॥ তাবলীগ জামাতের আয়োজনে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া তিন দিনব্যাপী এজতেমায় যোগদানের ব্যানারে বহু রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কায় প্রশাসন এ প্রক্রিয়া রোধে ব্যাপক তৎপরতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। গেল বছরও এজতেমা হয়েছে এই জেলায়।
তাবলীগ জামাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিবছর দেশের ৬৪ জেলার মানুষ বিশ^ এজতেমা পালন করতে ঢাকায় যান। বর্তমানে বিশ^ এজতেমাকে দুই ভাগে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। বিশ^ এজতেমায় ৩২ জেলার মানুষ ২ পর্বে অংশগ্রহণ করবেন এবং বাকি ৩২ জেলার মানুষ নিজ নিজ জেলায় এজতেমা করার অনুমতি দিয়েছেন মুরব্বিরা। তারই অংশ হিসেবে সীমান্তবর্তী জেলা কক্সবাজারে এজতেমা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এদিকে নিরাপত্তার বিষয়ে কক্সবাজার পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন জানান, কক্সবাজারে যে এজতেমা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সেজন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নিয়মিত টহল দেবে পুলিশ সদস্য ও গোয়েন্দারা।
এনভিসি নিতে বর্মী মুসলমান সংগঠনের বিবৃতি ॥ মিয়ানমারের উল্লেখযোগ্য ৫টি মুসলিম সংগঠন নেতৃবৃন্দ রোহিঙ্গাদের ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড (এনভিসি) নিতে নির্দেশনা দিয়েছে। এনভিসি কার্ড নিলে দেশে শান্তি ফিরে আসতে পারে বলে মুসলিম সংগঠন নেতৃবৃন্দ বিবৃতি দিয়েছেন।
সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা নিবন্ধিত ॥ উখিয়া ও টেকনাফের ১২টি অস্থায়ী কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গাকে নিবন্ধন করা হয়েছে। সাতটি ক্যাম্পের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে চলমান এ নিবন্ধনের কাজ করছে সরকারের পাসপোর্ট অধিদফতর।সুত্র: জনকন্ঠ
–
পাঠকের মতামত